আক্তারুজ্জামান: মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে প্রতি বছর নতুন নতুন ইটভাটা গড়ে উঠছে। আর এ সকল ইটভাটায় প্রতিদিন গড়ে ১০হাজার মন জ্বালানী কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। আর এসব কাঠের উৎস সংরক্ষিত বা গৃহস্থালীর বাগান। ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় এলাকার পরিবেশ দূষিত হচ্ছে । ছড়াচ্ছে বিভিন্ন রোগবালাই । এতে পরিবেশ যেমন নষ্ট হচ্ছে, তেমনি নষ্ট হচ্ছে আবাদী জমি, উজাড় হচ্ছে গাছ পালা, ভারসাম্য হারাচ্ছে প্রকৃতি।
প্রাপ্ত তথ্যমতে গাংনী উপজেলায় মোট ৩৮ টি ইটভাটা রয়েছে।এর মধ্যে ২৩ টি ইটভাটার সাময়িক সনদ পত্র থাকলেও বাকি ১৫টি ইটভাটার কোন অনুমোদন নেই।এগুলোর মধ্যে গাংনী পৌরসভার মধ্যে ৩ টি ও অন্যান্য অঞ্চলে ১২ টি ইটভাটা রয়েছে।গাংনী উপজেলার লক্ষীনারায়ন পুর ধলার মোড়ে মোসত্মাফিজু রহমান কোন অনুমোদন ছাড়ায় টিনের চিমনি দিয়ে কাঠজ্বালিয়ে প্রভাবশালী রাজনীতিকরা প্রশাসনের অনুমতি না নিয়ে ক্ষমতার জোরে ইটভাটা তৈরী করছে। ভাটার চিমনি তৈরীতে সরকারী নির্দেশনা থাকলেও ইটভাটা মালিকরা ব্যারেল ড্রামের চিমনি ব্যাবহার করছে । ইতোমধ্যে পুলিশ প্রশাসন অবৈধ ইটভাটার তালিকা তৈরী করে অভিযান পরিচালনার জন্য জেলা প্রশাসনের নিকট আবেদন করলেও অজ্ঞাত কারণে অভিযান থমকে গেছে।
সচেতন মহলের অভিযোগ,যেখানে সেখানে ইটভাটা তৈরী হওয়ায় আবাদী জমিগুলো নষ্ট হচ্ছে। একটি ইটভাটা তৈরী করতে কমপক্ষে ৭/৮ একর জমির প্রয়োজন হয়। অনেক সময় মাটির প্রয়োজন হলে এলাকার লোকজনের কাছ থেকে আবাদি জমির উপরের এক থেকে দেড়ফুট মাটি কেটে ইট তৈরী করে। এতে ফসলী জমির উর্বরা শক্তি নষ্ট হয়। মুধু তাই নয়, ইটভাটার নির্গত কালো ধোয়ায় এলাকার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে ও আবাদি জমির ফসল নষ্ট হচ্ছে। কোন ইটভাটায় অনুমতিপত্রের শর্তনুযায়ী এক টুকরা কয়লা ব্যবহার করা হয় না । ব্যবহার করা হয় কাঠ। বিশেষ করে ফলজ ও বনজ বৃক্ষ ছাড়াও বাঁশের মোথা ব্যবহারের ফলে বাঁশঝাড় উজাড় হচ্ছে।
ইটপোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৮৯ ও ২০০১ সনের ১৭ নং অনুচ্ছেদের ৪ ও ৫ ধারায় উল্লেখ রয়েছে যে, আবাদি জমিতে কোন ইটভাটা তৈরী করা যাবেনা ও ১২০ ফুট চিমনি ব্যবহার করতে হবে। এছাড়াও কাঠ পোড়ানো যাবেনা। অথচ সকল ইটভাটায় কয়লার বদলে কাঠ ব্যবহার করা হচ্ছে। মাঝে মধ্যে প্রশাসনের লোকজন জরিমানা আদায় করলেও ইটভাটা বন্ধ করেনা। ফলে প্রভাবশালীরা প্রতি বছর নতুন নতুন ইটভাটা তৈরী করছে।
গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিএইচএ ডাঃ হাসান আলী জানান, ইটভাটায় নির্গত কালো ধোয়ায় মানুষের শ্বাসকষ্ট, হাপানি, ক্যান্সারসহ নানা রোগের সৃষ্টি হয়। তাছাড়া অতিরিক্ত কার্বণ-ডাই অক্সাইডের কারণে ফসল ও এলাকার পরিবেশ নষ্ট হয়।অনতি বিলম্বে পরিবেশ রক্ষায় প্রশাসনিক পদক্ষেপ জরুরী।